শবে বরাতের রোজা কয়টি? শবে বরাত সম্পর্কে বিস্তারিত
ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষ; ধর্মপ্রাণ মুসলমাদের জন্য শবে বরাত (Shab-e-Barat) অন্যতম পবিত্র উৎসব (Muslim Festival), যা আমাদের দেশ সহ বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম দেশে অত্যন্ত নিষ্ঠা সহকারে পালন করা হয়।
ফারসি শব্দ ‘শবে বরাত’ এর অর্থ হল সৌভাগ্য এবং ক্ষমার রাত্রি। । বিশ্বের সকল মুসলমানদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ একটি রাত। ইসলামী ক্যালেন্ডারের ৮ম মাস শাবান এর ১৪ ও ১৫ তম রাতে এই উৎসব পালন করার রীতি।
শবে বরাতকে ইসলামী বর্ষপঞ্জির পবিত্রতম রাত হিসাবে মনে করা হয় যা বা মধ্য শাবান রজনী লাইলাতুল-বরাত বা লাইলাতুল-বরাত নামেও অভিহিত করা হয়।
বিস্তারিতঃ আজ শাবান মাসের কত তারিখ? শাবান মাসের ক্যালেন্ডার দেখুন এখানে__
শবে বরাত সম্পর্কে হাদিস । লাইলাতুল বরাত সম্পর্কে হাদিস
সিহাহ সিত্তাহ বা বিশুদ্ধ ছয়টি হাদিসগ্রন্থের কোনো কোনো হাদিসে এই রাতের বিশেষত্ব নির্দেশক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হাদিসগুলোর সনদ বিভিন্ন মানের এবং এ বিষয়ে অনেক বিশেষজ্ঞদের মতভেদ রয়েছে।
তবে হাদিস শরিফে ‘শবে বরাত’ বলতে যে পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়েছে, তা হলো “নিসফ শাবান” বা “লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান” তথা “শা’বান মাসের মধ্য রজনী”। এ বিষয়ে একটি হাদীসে এসেছে
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে আত্নপ্রকাশ করেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত তাঁর সৃষ্টির সকলকে ক্ষমা করেন।
— ইবনু মাজাহ, আস- সুনান ১/৪৪৫
অন্য কয়েকটি সহীহ হাদীসে বর্নিত হয়েছে, রাসুল (সঃ) শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোযা রাখতেন। শাবান মাসের রোযা ছিল তার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। এমাসের প্রথম থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত এবং কখনো কখনো প্রায় পুরো শাবান মাসই তিনি নফল সিয়াম পালন করতেন। এ বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,
“এ মাসে রাব্বুল আলামীনের কাছে মানুষের কর্ম উঠানো হয়। আর আমি ভালবাসি যে, আমার রোযা রাখা অবস্থায় আমার আমল উঠানো হোক।”
— (নাসাঈ, আস-সুনান ৪/২০১; আলবানী, সহীহুত তারগীব ১/২৪৭
২০২৩ সালের শবে বরাত কত তারিখে?
আরবি ক্যালেন্ডার ২০২৩ অনুযায়ী ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ হতে শাবান মাস শুরু হবে। এই হিসেবে ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৪ শাবান ৭ মার্চ ২০২৩ (মঙ্গলবার) দিবাগত রাতে পবিত্র শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত পালিত হবে।
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে এবারের শবে বরাতের ছুটি কবে? বাংলাদেশের প্রতি বারের মত এবারেও শবে বরাতের রাতের পরদিন অর্থাৎ ৮ মার্চ ২০২৩ সরকারি ছুটি থাকবে।
শবে বরাতের রোজা কয়টি?
হযরত আলী (র) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নবী করিম (সঃ) বলেছেনঃ
১৪ই শাবান দিবাগত রাত যখন আসে তোমরা এই রাতটি ইবাদাত-বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনের বেলা রোজা রাখো।
ইবনে মাজাহ
এর থেকে বোঝা যায়, শবে বরাতের দিনে একটি রোযা রাখা যথেষ্ট। তবে আমাদের দেশে বিভিন্ন আলেম ওলামাদের মতে শবে বরাতের জন্য তিনটি রোযা রাখা উত্তম।
এক্ষেত্রে শবে বরাতের আগের দিন বরাতের দিন ও পরের দিন মিলিয়ে তিন দিন রোযা রাখতে পারেন।
এছাড়াও শবে বরাতের রাতে ইবাদাত সম্পর্কে একটি হাদিসে এসেছেঃ
১৪ই শাবান সূর্যাস্তের পর আল্লাহ প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি যাদের আমি ক্ষমা করবো? কোনো রিযিক প্রার্থী আছো কি যাদের আমি রিযিক দিবো? আছো কি কোনো বিপদগ্রস্ত যাদের আমি উদ্ধার করবো? এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ আহ্বান করতে থাকেন।
ইবনে মাজাহ
সুতরাং এ রাত মুসলমানদের জন্য অনেক ফজিলতপূর্ণ একটি রাত। শবে বরাতের এ রাতে ইবাদত বান্দেগি করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনি চাইলে এ রাতে কাজা হয়ে যাওয়া নামায পড়তে পারেন। তবে শুধুমাত্র ফরজ ও বিতির নামাজের কাজা পড়বেন।
শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে পারেন। যা দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য হাসিল হয়।
ভাষাভেদে শবে বরাতের ভিন্ন নাম
দেশভেদে তাদের নিজস্ব ভাষা অনুযায়ী এই দিবস বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন ইরান ও আফগানিস্তানে নিম শাবান, তেমনি তুরস্কে বিরাত কান্দিলি, আর ভারতীয় উপমহাদেশে নিফসু শাবান বা শবে বরাত নামে পরিচিত। তবে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া জুড়ে এই দিনটি অন্যান্য মহাদেশের তুলনায় ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করা হয়।
ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, আজারবাইজান, তুরস্ক, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, কাজাখস্তান, তুর্কমিনিস্তান, কিরগিজস্তান শবে বরাতের উৎসব পালন করে।
রমজানের আগমনী বার্তা
পবিত্র শবে বরাতে দিনে অনেকে রোযা রাখেন। সন্ধ্যার পর কবরস্থানে যান, আপনজনের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করেন তাঁরা।
পবিত্র শবে বরাত মুসলিমদের কাছে এককথায় রমজানের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে, আরবি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী শাবান মাসের পরবর্তী মাসই রমজান মাস। তাই শবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ বরাতের রাত থেকে রমজানের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে।
আরো পড়ুনঃ